ট্রাম্পের সঙ্গে চুক্তি করুন, নইলে ইসরাইলি হামলার ঝুঁকি নিন

ট্রাম্পের সঙ্গে চুক্তি করুন, নইলে ইসরাইলি হামলার ঝুঁকি নিন

আন্তজার্তিক ডেস্ক : May 31, 2025

দুই দশকেরও বেশি সময় পর গত এপ্রিলে সৌদি রাজপরিবারের কোনো জ্যেষ্ঠ সদস্য হিসাবে ইরান সফর করেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান। সফরে ইসরাইলের সঙ্গে বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির আলোচনাকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার জন্য সৌদি আরবের বাদশাহর একটি বার্তা ইরানের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। চারটি সূত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

সৌদির দুটি সূত্র ও ইরানের দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতার আশঙ্কায় সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ উদ্বিগ্ন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে একটি বিশেষ বার্তা পৌঁছে দিতে তিনি গত মাসে ছেলে প্রিন্স খালিদ বিন সালমানকে তেহরান সফরে পাঠান।

সূত্র জানিয়েছে, ১৭ এপ্রিল তেহরানে প্রেসিডেন্ট ভবনে ইরানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন সৌদির প্রতিরক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি উপস্থিত ছিলেন। প্রিন্স খালিদ ইরানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলেছেন, ট্রাম্পের দল দ্রুত একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে চাইবে এবং কূটনীতির চ্যানেল দ্রুত বন্ধ হয়ে যাবে।

উপসাগরীয় দুটি সূত্র মতে, সৌদি মন্ত্রী বলেছেন, ইসরাইলি হামলার মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো ভালো হবে। দুটি উপসাগরীয় এবং আলোচনার সঙ্গে পরিচিত একজন জ্যেষ্ঠ বিদেশি কূটনীতিক সূত্র জানিয়েছে, সৌদিমন্ত্রীর যুক্তি ছিল গাজা এবং লেবাননের সাম্প্রতিক সংঘাতে এই অঞ্চল এরইমধ্যে বিপর্যস্ত। ফলে নতুন আরেকটি সংঘাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

৩৭ বছর বয়সি সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর তেহরান সফরের খবর গণমাধ্যমে প্রচারিত হলেও, বাদশাহ সালমানের গোপন বার্তার বিষয়বস্তু আগে প্রকাশিত হয়নি। সফরে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সঙ্গেও পৃথক বৈঠক করেন তিনি। চারটি সূত্র মতে, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ওয়াশিংটনে সৌদি রাষ্ট্রদূত থাকা প্রিন্স খালিদ ইরানি কর্মকর্তাদের সতর্ক করে বলেছেন, পরমাণু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনায় না-ও থাকতে পারেন।

সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বার্তা ইরানের নেতৃত্বের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে তা জানা সম্ভব হয়নি। চারটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, বৈঠকে পেজেশকিয়ানের প্রতিক্রিয়া ছিল— ইরান পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার মাধ্যমে অর্থনৈতিক চাপ কমাতে একটি চুক্তি চায়।

প্রসঙ্গত, ওমানের মধ্যস্থতায় পরমাণু ইস্যুতে নতুন একটি চুক্তির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত পাঁচ দফায় আলোচনা হয়েছে। সবশেষ গত শুক্রবার (২৩ মে) ইতালির রাজধানী রোমে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের পর উভয় পক্ষই জানায়, আলোচনায় অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে। যদিও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে মতানৈক্য রয়েই গেছে। এসব বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধিরা ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে ইরানিরা জানিয়েছেন, চুক্তি হোক বা না হোক, কোনো অবস্থাতেই পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ হবে না।

Share This