সীমান্তে অচলাবস্থা বাণিজ্য ব্যাহত

সীমান্তে অচলাবস্থা বাণিজ্য ব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক : December 03, 2024

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে যায়, সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন। তবে ব্যারিকেড ভেঙে শেষ পর্যন্ত আরএসএ’র নেতৃত্বে থাকা ‘হিন্দু ঐক্যমঞ্চ’র নেতারা সীমান্ত এলাকায় আসতে পারেননি।

তাদের এই মুভমেন্টের পর বাংলাদেশের শ্যাওলা সীমান্ত বন্দর দিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়।

পোর্ট কর্মকর্তারা বলেন, নিরাপত্তা বিবেচনায় কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় গতকালও  পোর্টের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ‘বাংলাদেশ চলো’ মুভমেন্টে স্থানীয় ‘হিন্দু ঐক্যমঞ্চ’র নেতারা বলছিলেন; ‘জীবন গেলে যাবে, তবুও তারা বাংলাদেশে যাবেন।’ বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের প্রতিবাদে তারা এই মার্চ কর্মসূচি পালন করছেন বলে জানান। 

এদিকে- আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জের সুতারকান্দি সীমান্তে যখন মুভমেন্ট নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছিল তখন রবিবার পার্শ্ববর্তী করিমগঞ্জ স্টিমারঘাটের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের সঙ্গে আমদানি- রপ্তানি বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। করিমগঞ্জের মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া খবরে জানা গেছে; ভারত অংশের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় বাংলাদেশে কঠিন পরিস্থিতি চলছে বলে ব্যবসায়ী নেতারা উল্লেখ করেন।

ব্যবসায়ীদের এই সিদ্ধান্ত না মেনে গতকাল সকালে করিমগঞ্জ পোর্ট দিয়ে কার্যক্রম শুরু হলে করিমগঞ্জ এলাকার স্থানীয় বিধায়ক কমলাক্ষ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে করিমগঞ্জের কিছু সংখ্যক নেতাকর্মী পোর্টে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও গতকাল দুপুরের পর জকিগঞ্জে ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে; বিধায়ক কমলাক্ষ চক্রবর্তী কিছু সংখ্যক কর্মী নিয়ে এসে নদী তীরবর্তী স্টিমারঘাটের পোর্টে আসেন। 

এ সময় ওই পোর্ট দিয়ে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কিছু মালামাল ঢুকছিল। তিনি মালামালের একটি চালান আটক করে প্রকাশ্যে আগুন ধরিয়ে দেন। এক পর্যায়ে তিনি নিজেই বাঁশ এনে পোর্ট এলাকায় ব্যারিকেড দেন। একই সঙ্গে ঘোষণা দেন; বাংলাদেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পোর্ট দিয়ে আমদানি- রপ্তানি বন্ধ থাকবে। তবে এই মুভমেন্টের আগে দু’দেশের মধ্যে কয়েক গাড়ি মালামাল আসা-যাওয়া করেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

বাংলাদেশের জকিগঞ্জ পোর্টের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- সকালে করিমগঞ্জ থেকে নদীপথে দুই ট্রাক পণ্য এসেছিল। ওই অংশে কিছু বিশৃঙ্খলার কারণে বিকাল পর্যন্ত মালামাল আসেনি ও বাংলাদেশ থেকে যায়নি। সিলেটের ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছেন; ভারত অংশের সমস্যার কারণে বিয়ানীবাজারের শ্যাওলা ও জকিগঞ্জ পোর্ট দিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। 

ভারতের ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে যখনই সম্মতি আসবে তখনই ফের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা হবে। সিলেট আমদানিকারক গ্রুপের যুগ্ম সম্পাদক ও শ্যাওলা বন্দরের ব্যবসায়ী জয়ন্ত চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন- করিমগঞ্জের সুতারকান্দি স্থল বন্দরের ঝামেলার কারণে  রোববার থেকে সিলেটের শ্যাওলা ও জকিগঞ্জ পোর্ট দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। করিমগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমদানি-রপ্তানি শুরু হতে পারে বলে জানান তিনি। 

শ্যাওলা পোর্টের সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ উদ্দিন বলেন- ‘হিন্দু ঐক্যমঞ্চ’র মুভমেন্টের আগে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক ছিল। এজন্য  পোর্টে মালামাল লোড করা ট্রাক অপেক্ষমাণ ছিল। বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার কারণে ওই ট্রাকগুলো আটকা পড়ে। আপাতত লোড করা ট্রাকগুলো খালাস করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে; বাংলাদেশ অংশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

স্থানীয়দের মধ্যেও এ নিয়ে কোনো উত্তেজনা নেই। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি’র ১৯ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল মেহেদী হাসান জানিয়েছেন- বাংলাদেশ অংশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সীমান্তে পূর্বের মতো বিজিবি’র পক্ষ থেকে টহল জোরদার রয়েছে। 

জকিগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আফসানা তাসনিম জানিয়েছেন- সীমান্তে নজরদারি চলছে। একই সঙ্গে বিজিবি’র পক্ষ থেকে অতিরিক্ত লোকবল নিয়ে টহল বাড়ানো হয়েছে।    

Share This