অফিসার্স অ্যাড্রেসে বুধবার সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত। এছাড়া তিনি চট্টগ্রাম বন্দর ও করিডর নিয়েও মন্তব্য করেছেন। তার এ বক্তব্য জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বৃহস্পতিবার মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সঠিক। এর আগেও তিনি বলেছেন-১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত। তার এই বক্তব্য জনমনের যে আকাঙ্ক্ষা, তারই প্রতিফলন। বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভোটের অধিকার থেকে এতদিন বঞ্চিত ছিল। যত শিগগিরই সম্ভব মানুষকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া দরকার। যাতে আমরা একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ভেতর চলে যেতে পারি। জাতীয় স্বার্থ রক্ষা বিষয়ে সেনাপ্রধান উল্লেখ করেছেন-করিডর দেওয়া ঠিক হবে না, এটাও একটি সঠিক সিদ্ধান্ত। এছাড়া ওয়াকার-উজ-জামান আরও বলেছেন, বন্দর অন্যের হাতে হস্তান্তর করার যে সিদ্ধান্ত সেটা বর্তমান সরকার না নিয়ে, ভবিষ্যতের নির্বাচিত যে সরকার আসবে তাদের কাছে ছেড়ে দেওয়া উচিত। এটাও সঠিক বলে মনে করছি। কারণ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সিদ্ধান্ত নির্বাচিত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও নেওয়া উচিত না বলে আমরা মনে করি।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. বায়েজিদ সরোয়ার যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে সরকারের রোডম্যাপ ঘোষণা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। সেনাপ্রধান সম্ভবত সেই গুরুত্বের কথা বলেছেন। করিডর প্রদান একটি জাতীয় নিরাপত্তা ও স্পর্শকাতর বিষয়। এমন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য প্রয়োজন। সেনাপ্রধান মনে হয় সেই স্পিরিটেই কথাটি বলেছেন। মব জাস্টিস দেশে বেড়েছে, সেনাপ্রধান সেই বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী সমর্থন করেছে। আমরা খুব চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছি। এই সময় বিভক্তি, বিভাজন কাম্য নয়। আশাকরি অন্তর্বর্তী সরকার মাঠের বাস্তবতা, জন-আকাঙ্ক্ষা, দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে সেনাবাহিনীসহ সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নালের সম্পাদক আবু রুশদ মো. শহিদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সেনাপ্রধান ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন, আসলে নির্বাচন সব দলই চাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টাও বলেছেন নির্বাচন দ্রুত করার জন্য সংস্কার কাজগুলো এগিয়ে আনতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সংশ্লিষ্টরা কাজগুলো করতে পারছে না। প্রশাসন ঠিকভাবে কাজ করছে না। একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
পাশাপাশি ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে। এসব বিষয় ঠিক পথে আনতে হলে নির্বাচন ছাড়া সামনে কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ ছিল, তিনি পরপর কয়েকটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করেননি। যেখানে জনগণের মতামত প্রতিফলিত হয়নি। বাংলাদেশের মানুষ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে। তাই সেনাপ্রধান নির্বাচন নিয়ে যে কথা বলেছেন তা যথাযথ। জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে তিনি জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মি ওই এলাকায় যে সমস্যা দেখা যাচ্ছে, করিডর ইস্যু আছে এসব নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তায় হুমকি দেখা দিতে পারে। এসব সমাধান করতে নির্বাচিত সরকার লাগবে।