স্বৈরাচারী শাসনামলে পুলিশকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছিল : প্রধান উপদেষ্টা

স্বৈরাচারী শাসনামলে পুলিশকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছিল : প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : April 29, 2025

স্বৈরাচারী শাসনামলের ১৫ বছরে দেশের পুলিশ বাহিনীকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করায় সমস্ত ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

 

তিনি বলেন, স্বৈরাচারের অবৈধ অন্যায় আদেশ পালন করতে গিয়ে পুলিশ বাহিনী ব্যাপকভাবে জনরোষের মুখে পড়ে। অনেক সৎ পুলিশ সদস্যদেরও এজন্য মাশুল দিতে হয়েছে। 

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

 

এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, আইজিপিসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

প্রধান উপদেষ্টা পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, সর্বস্তরের মানুষের অধিকার, মর্যাদা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে, কোনো বৈষম্য থাকবে না- যুগ যুগ ধরে এটি ছিল মানুষের আকাঙ্ক্ষা। এই আকাঙ্ক্ষা পূরণে জোর ভূমিকা রাখতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।

 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব গ্রহণ করে সে সময় এ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল। পুলিশের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। সরকার পরিস্থিতি উন্নতির জন্য যা কিছু প্রয়োজন সব রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। 

 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, খুব ভালো লাগছে সবার সঙ্গে দেখা করতে পেরে, এই পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষ্যে দেখা হলো। আপনাদের কাছ থেকে কিছু প্রাথমিক বক্তব্য শুনলাম। শুনে বুঝতে পারলাম যে অনেকগুলো কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। যেটা আমাদের পক্ষ থেকে করার কথা ছিল, তা হয়নি। এর আগে আমরা একবার নিজেদের মধ্যে বসেছিলাম। আমার কাছে খুবই খারাপ লাগছিল। কী রকম পরিস্থিতিতে আপনাদের কাজ করতে হয়, তা আমার জানা ছিল না। আপনাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন কত কঠিন, সেটার মাত্রা কত গভীর। 

ড. ইউনূস বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আশা করি তা বাস্তবায়িত হয়েছে। কতদূর হয়েছে, সেটা আবার খোঁজ নেবো। আমরা আজকে আবার বসবো যাতে করে আপনাদের কাজের সহায়ক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যায়। আপনারা যেন কাজে উৎসাহ পান এবং পরিস্থিতি সহায়ক হয়। ভালো লাগছে যারা প্রযুক্তির মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। আশা করছি ভবিষ্যতে একসঙ্গে বসে আলাপ করার সুযোগ হবে। 

পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষ্যি বাংলাদেশ পুলিশের সব সদস্যকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা লিখিত বক্তব্যে বলেন, এখানে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। ৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ২৫ মার্চ কাল রাতে রাজারবাগ এই পুলিশ লাইনে বাঙালি পুলিশ সদস্যরা প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই ইতিহাস ভোলার নয়। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর গৌরবময় ইতিহাসে এটি মহাগৌরবের। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ সদস্যদের তিনি স্মরণ করে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। 

পুলিশের সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের কল্যাণে দ্রুত কয়েকটি বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ সবার সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার কারণে আপনাদের কথা শোনার পর আমরা আবার দ্রুত একবার বসব যাতে করে যে সমস্ত সমস্যা আছে, সেগুলোর সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। 

তিনি বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু। পুলিশ বাহিনীকে সেই ইমেজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটা কঠিন। কঠিন হলেও এটাই ন্যায্য এবং এটাই আমাদের করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রথমবারের মতো এবার পুলিশ সপ্তাহে ধর্মীয় নেতা, সাংবাদিক ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে পৃথক একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে আমি জানতে পেরেছি। এই বৈঠকে পুলিশের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা আলোচনা হবে। আমার প্রত্যাশা হলো, এটিই যেন চলমান থাকে। প্রতিবছর পুলিশ সপ্তাহে যেন এ ধরনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আর পুলিশ সপ্তাহের জন্য অপেক্ষা করতে যেন না হয়। সুযোগ পেলেই এ ধরনের বৈঠকের আয়োজন করতে হবে, যাতে করে পরস্পর ভুল বোঝাবুঝি পরিষ্কার হয়ে যায়। পুলিশের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব কমিয়ে আনতে এ ধরনের বৈঠক অত্যন্ত জরুরি।

Share This